জীবন একটা যাত্রা, অনেকটা ট্রেন যাত্রার মতো। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায়, আমাদের গন্তব্যে নেমে যেতে হয়।
আমিও যাত্রা করেছিলাম, আশা করেছিলাম এই যাত্রা সুন্দর হোক, গন্তব্য জানা ছিলো না, যদিও জানতাম ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে একসময়।আশেপাশে অচেনা যাত্রীরাও যার যার গন্তব্যের অপেক্ষায় ছিল। আমি সিট নম্বর খুঁজে পেয়েছিলাম ব্যস্ত ট্রেনে স্থির হয়ে বসে ছিলাম….
আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম.. ট্রেন ছুটছে.. চলন্ত ট্রেন থেকে সবকিছুই দূরে দেখা যায়। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ, নদী, শহর, গাছ সবকিছুই খুব সুন্দর লাগে। কোন কিছুই স্থির নয়, চলমান, আবছা। এখানে উজ্জ্বল লেমন ইয়েলো নেই এখানে শান্ত ইয়েলো অকার বিদ্যমান। চোখ শান্ত থাকে, সব সরে সরে যায়। একটার পর একটা সুন্দর দৃশ্য আসে আমাকে আচ্ছন্ন করে মুগ্ধ হই ; আমি চোখ বন্ধ করি। আকাঙ্ক্ষা জাগে রহস্যময় লাগে আবারো চোখ খুলি…
আমি জানালা দিয়ে সামনে তাকাই…
ট্রেন ছুটছে, জানালা দিয়ে আমার দৃষ্টি চলে যায় দূরে.. যেখানে মাটি ও আকাশ মিশেছে। একটা ছন্দ তাল নিয়ে মাঝে মাঝে দোল দিচ্ছে। কতো নদী, নৌকা, বকেদের উড়ে যাওয়া দৃশ্যমান! সবাই কর্মব্যস্ত, শুধুই আমরা যাত্রীরা- ধীর স্থির কোন তাড়াহুড়া নেই।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামে, দূরের ঘরবাড়ি গাছপালা আরো ঝাপসা হতে থাকে। পলকেই গ্রাম আবার শহর অতিক্রম করে ট্রেন, আমি তাকিয়ে থাকি দৃশ্য গুলো মিস করতে চাইনা, চোখের পলক ফেলিনা। সরে সরে যাওয়া দৃশ্য গুলো দেখি। দূর থেকে সবই সুন্দর! কাছ থেকে কি তা এত সুন্দর?
রাত বাড়ছে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে দূরের অন্ধকার তবুও ধূসর। ট্রেনের মৃদু আলোয় শুধু কিছু নাম না জানা পোকা আর বাতাসের ঝড় ছাড়া কিছু দেখা যায় না।
আমি ট্রেনের ভেতর চোখ রাখি, যাত্রীরা আপন হয়ে উঠেছে, একে অন্যের সাথে খাবার শেয়ার করছে, বাড়ি থেকে আনা রুটি ভাজি অথবা ট্রেন থেকে কেনা বাদাম ঝাল মুড়ি । আলাপ শুরু হয়েছে… বন্ধুত্ব হচ্ছে কখনো তা বন্ধুত্ব কেও ডিঙ্গিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ গন্তব্যে নেমে যাচ্ছে, সময় ঘনিয়ে আসছে…