joba_new_logo

Connect With Joba

হো চি মিন শহরে থার্টিফার্স্ট নাইট

হো চি মিন শহরে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন ও আমার অভিজ্ঞতা

আমৱা ডিস্ট্রিক্ট টু তে থাকি, যেহেতু আমরা অল্প কিছু বাঙালি এখানে আছি তাই আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম আমরা নতুন বছর সেলিব্রেশন করব এবং বাচ্চাদের নিয়ে একটু খানাপিনা করব,আমৱা একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে গেলাম সেখানে খাওয়া-দাওয়া করার পরে আমরা ঠিক ১১ঃ০০ টায় বের হলাম। কিন্তু পথঘাট অনেক ফাঁকা, কোথাও কোন মানুষ নেই এত নীরবতা কেনো বুঝলাম না, কোথাও কোন সেলিব্রেশন কি নেই? নতুন শহর কিছুই জানি না, এদের ভাষা বুঝি না, ঠিক বুঝতে পারলাম না,কোন আয়োজন আছে কিনা!

ঠিক করলাম আমরা রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঘুরবো, দেখব এই শহরের সেলিব্রেশন হয় কিনা। আমরা ধরে নিলাম যেহেতু রাত দশটার পর সবকিছু নীৱব হয়ে যায় তাই আজকেও হয়তো এরকমই পাব। যথারীতি আমরা কার ভাড়া করে বের হয়ে পড়লাম এবং বের হওয়ার পরে দেখলাম রাস্তায় প্রচুর বাইক, যদিও এটা বাইকের শহর, কিন্তু এত রাতে এত বাইক দেখা যায় না। আজকে সবাই বের হয়েছে সুন্দর সুন্দর পোশাক পড়েছে এমনকি ছোট বাচ্চারাও বাইকে করে বাবা মার সাথে বের হয়ে এসেছে। ব্রিজের উপর দিয়ে নদী পার হতে হতে দেখলাম ব্রিজের উপরেই সবাই দাঁড়িয়ে অথবা বসে পড়েছে। আমরা ভাবলাম হয়তো এমনিতেই বসেছে। কিছু দূৱ যেতেই দেখলাম বাইকের সমুদ্ৰ,মানুষ যে যেখানে পারছে বাইক দাঁড় করিয়ে, কিছু একটাৱ জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা ঠিক বুঝলাম না কি হতে যাচ্ছে! কিছু দূরে যাওয়ার পরে দেখলাম এত বেশি বাইক যে আর আগানো যাচ্ছে না, ড্রাইভার আমাদেরকে বলল এখানে সেলিব্রেশন হবে, তোমাদের উচিত এখানে নেমে যাওয়া এবং এটা উপভোগ করা। আমরা তার কথামতে, গাড়ী ছেড়ে দিলাম এবং নেমে পড়লাম। নামাৱ পৱ বুঝতে পারলাম না কোথায় যাব! এত মানুষের ভিড়। আমরা কিছুটা আতঙ্কিত হলাম।শরীফ আমাদের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো আমার হাতে ফোন ও পাৱ্স ছিল আমি খুব ভয়ে ছিলাম। আর আমরা আশেপাশে কোন ফরেনার দেখতে পাচ্ছিলাম না, সব ভিয়েতনামিজ। ভয়ে ভয়ে আমরা সামনে আগালাম, কোথায় যাচ্ছি, জানিনা । বাইক গুলো ইউটাৰ্ন নিয়ে এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে । আমৱা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেলাম, দেখলাম সবাই বসে পড়েছে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ বাইকের উপরেই বসে আছে ,সবাই অপেক্ষা করছে কিছু একটা হবে। নদীর কাছে চলে গেলাম এখানে অনেক শিশুরা আমাদেরকে হাই দিলো। আমার অপেক্ষা করতে থাকলাম। মানুষের চোখে মুখে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর আমরা ভয়ে আতঙ্কে দাঁড়িয়ে থাকলাম এত ভিড় না জানি কি হয়! কিন্তু কোথাও কিছু হলো না। চারপাশে পুলিশের টহল,এই প্রথম আমরা ভিয়েতনামে পুলিশ দেখতে পেলাম।

ঠিক বারোটা আতশবাজি শুরু হলো, নদীর ধার দিয়ে মানুষেরঢল। সবাই সেটা দাঁড়িয়ে খুব শান্তভাবে উপভোগ কৱলো । কেউ কেউ সুন্দর সুন্দর আতশবাজি দেখে আনন্দে উল্লাস প্রকাশ করল। ঠিক বারোটা বেজে ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই আতশবাজি চললো। এৱ পরেই সবাই যার যার বাইক নিয়ে গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করল আমরা অবাক হলাম এই ১৫ মিনিটের জন্যই মানুষ এখানে ভিড় জমিয়েছিল! নতুন বছর কে, এত শান্ত, সুন্দরভাবে যে গ্রহণ করা যায় , তা প্রথম দেখলাম! প্রচুর মেয়েরা এসেছে তাদের গায়ে নানা রকমের পোশাক, তারা উদযাপন করছে, কোথাও কোনো ইভটিজিং নেই কোন ধাক্কাধাক্কি নেই কারো হাতে আইসক্রিম অথবা কারো হাতে সেদ্ধ আলু।এই তাদের উদযাপন। ধীরে ধীরে রাস্তাগুলো ফাঁকা হতে শুৱু কৱলো, আমরা নদীর পাড়েই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম এবং ভিড় কমে যাওয়ার অপেক্ষা করতে থাকলাম । আমরা একটা গাড়ি ভাড়া করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। ভিয়েতনামেৱ আলোকউজ্জ্বল শহরে থার্টি ফার্স্ট নাইট আমার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা,তবে কয়েকটা বিষয় খেয়াল করলাম – যেহেতু মানুষ নিজেদের ট্রান্সপোর্টে এসেছে তাই যাতায়ত খৱচ নেই, বারোটা বাজার আগে ফুটপাতে সমস্ত দোকান তাড়াহুড়া করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তাই খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টা নেই এবং আতশবাজি ফানুস ওরানো এবং পটকা ফোটানো নেই তাই এখানেও একটা খরচ বেঁচে গেল। একে অন্যকে ফুলেরতোড়া উপহাৱ দেয় যা খুবই সুলভ এখানে।

শিশু-বৃদ্ধ সকলে মিলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং সুন্দর উদযাপন যা আমি আগে কখনো দেখিনি। সবার মধ্যেই আনন্দ, সবাই সুন্দরভাবে সুশৃংখল ভাবে আসলো এবং ফিরেও গেল,কোন দুর্ঘটনার খবর পেলাম না, এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে! সবাইকে নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *